একনজরে নোয়াখালীর ইতিহাস

বৃহত্তর নোয়াখালীর সামগ্রিক পরিচিতি

বৃহত্তর নোয়াখালীর সামগ্রিক পরিচিতি

১. ইতিহাস (প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান)

প্রাচীন যুগে এই অঞ্চল বঙ্গ ও সমতট জনপদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পাল ও সেন রাজাদের সময় হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব ছিল প্রবল।
মুসলিম শাসনামলে (১৩শ শতক থেকে) তুর্কি ও আফগান শাসকদের আগমন ঘটে। ইসলাম প্রচারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন সুফি দরবেশরা, বিশেষ করে শাহ নেয়ামতুল্লাহ ও শেখ ফজলুল হক।
মুঘল আমলে এই অঞ্চল নদীভাঙন ও চর জাগার কারণে পরিচিতি লাভ করে। এখান থেকেই “নোয়া” (নতুন) ও “খালী” (খাল) শব্দ দুটি মিলিয়ে “নোয়াখালী” নামের উৎপত্তি হয়।
ব্রিটিশ আমলে ১৮২১ সালে নোয়াখালী জেলা গঠিত হয়। ১৯৪৬ সালের নোয়াখালী দাঙ্গা ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৮৪ সালে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে বৃহত্তর নোয়াখালী তিনটি জেলায় বিভক্ত হয়: নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর।

২. ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি

  • লোকসংস্কৃতি: বাউল গান, পালা গান, লোককথা ও মঞ্চ নাটক।
  • ভাষা: নোয়াখালীয়া উপভাষা – স্বতন্ত্র ও গতিশীল।
  • ঐতিহাসিক নিদর্শন: বজরা শাহী মসজিদ (১৭৪১), রাজগঞ্জ মঠ, জমিদার বাড়ি, মাইজদী কোর্ট।

৩. প্রশাসনিক কাঠামো

বিভাগপরিমাণ
জেলা৩টি (নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর)
উপজেলা২০টি
ইউনিয়ন১৮৬টি
পৌরসভা১৮টি
গ্রামপ্রায় ১৮,০০০
সংসদীয় আসন১২টি (নোয়াখালী-৬, লক্ষ্মীপুর-৪, ফেনী-২)

৪. জনসংখ্যা (২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী)

জেলাজনসংখ্যা (প্রায়)
নোয়াখালী৩৫ লক্ষ
লক্ষ্মীপুর২০ লক্ষ
ফেনী১৮ লক্ষ
মোট৭৩ লক্ষ

৫. আয়তন

জেলাআয়তন (বর্গ কিমি)
নোয়াখালী৪,২০২
লক্ষ্মীপুর১,৪৫৫
ফেনী৯২৬
মোট৬,৫৮৩

৬. অর্থনীতি ও জীবনধারা

  • ধান, আলু, শাকসবজি, সুপারি, পান – প্রধান ফসল।
  • মাছ চাষ ও লবণ উৎপাদন – চরাঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ।
  • অর্থনীতির চালিকা শক্তি – কৃষি, প্রবাসী আয়, ক্ষুদ্র ব্যবসা ও মৎস্য খাত।

৭. শিক্ষা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

  • বিশ্ববিদ্যালয়: নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)
  • কলেজ: ফেনী সরকারি কলেজ, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ, বেগমগঞ্জ সরকারি কলেজ
  • বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান: ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, লক্ষ্মীপুর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ

৮. যোগাযোগ ব্যবস্থা

  • সড়কপথ: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হতে সহজ সংযোগ।
  • রেলপথ: নোয়াখালী-লাকসাম রেললাইন।
  • নৌপথ: চরাঞ্চলে নৌ যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ।
  • প্রস্তাবিত বিমানবন্দর: নোয়াখালীতে একটি আঞ্চলিক বিমানবন্দরের পরিকল্পনা রয়েছে।

৯. চরাঞ্চল ও জলবায়ু পরিবর্তন

নদী ও সমুদ্রের পলিমাটি জমে চর গঠিত হয়েছে। এসব চর ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও লবণাক্ততার ঝুঁকিতে রয়েছে।
সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প ও এনজিও সংস্থা চর উন্নয়ন, বনায়ন ও কৃষির উন্নয়নে কাজ করছে।

১০. উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব

  • মাওলানা ভাসানী – ফেনীর সন্তান, কৃষক আন্দোলনের নেতা।
  • অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ – শিক্ষক, সাহিত্যিক ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা।
  • মেজর জেনারেল এম এ মতিন – মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ।
  • মোহাম্মদ আলী – লক্ষ্মীপুরে জন্ম, স্থানীয়ভাবে সম্মানিত একজন ব্যক্তি।

১১. পর্যটন ও দর্শনীয় স্থান

  • সোনাপুর বিচ – জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত।
  • শাহ সোলায়মান চর – জীববৈচিত্র্যপূর্ণ।
  • সুবর্ণচর, হাতিয়া, ভাসানচর – চরাঞ্চলের সৌন্দর্য।
  • ঐতিহাসিক স্থান – বজরা শাহী মসজিদ, রাজগঞ্জ মঠ, মাইজদী কোর্ট।

১২. মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর নোয়াখালীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
অনেক সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ এই অঞ্চল থেকে এসেছেন।
ফেনী ও লক্ষ্মীপুরে নির্মিত হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ