"চট্টগ্রাম জেলা: ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং বাণিজ্যের বন্দর"





 চট্টগ্রাম জেলার ইতিহাস: বাংলাদেশের প্রাচীন সমুদ্রবন্দরের কাহিনি


বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম জেলা একসময় ছিল প্রাচীন বাণিজ্য ও সংস্কৃতির মিলনস্থল। প্রাকৃতিক বন্দর, পাহাড়-নদী এবং উপকূলঘেরা এই অঞ্চল যুগে যুগে নানা জাতি ও সংস্কৃতির পদচিহ্ন বহন করেছে।


প্রাচীন যুগের চট্টগ্রাম


চট্টগ্রামের ইতিহাস শুরু হয়েছে প্রাচীন সভ্যতার হাত ধরে। গ্রিক, আরব ও চীনা ভ্রমণকারীদের নথিতে এই অঞ্চলকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তখন এটি "সাতগাঁও" বা "সন্দ্বীপ" নামে পরিচিত ছিল। হিন্দু ও বৌদ্ধ শাসকের অধীনে থাকা এই অঞ্চল ছিল একটি সমৃদ্ধ জনপদ।


ইসলাম প্রচার ও মুঘল শাসন


১৩শ শতকের শেষ দিকে সুফি সাধকেরা ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামে আসেন। এর ফলে এখানকার সমাজে একটি নতুন ধারার সূচনা হয়। পরে ১৬৬৬ সালে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে শাইস্তা খানের সেনারা চট্টগ্রাম দখল করে নেন এবং তা মুঘল শাসনের অন্তর্ভুক্ত হয়।


ঔপনিবেশিক কাল


১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চট্টগ্রামের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ১৯৩০ সালে বিপ্লবী সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণ হয়, যা ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের এক সাহসী অধ্যায় হয়ে আছে।


মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা


১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এখানেই প্রথমবারের মতো স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারিত হয়। কর্ণফুলী নদী ও বন্দরনগরী হিসেবে চট্টগ্রাম কৌশলগত দিক থেকেও ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


আধুনিক চট্টগ্রাম


আজকের চট্টগ্রাম দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর, অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং শিল্পকেন্দ্র। বাণিজ্য, পর্যটন, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে এই জেলার অবদান অনস্বীকার্য।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ